সুজানগর মুক্ত দিবসে বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা সর্বস্তরের জনতা
এম এ আলিম রিপনঃ ১৪ ডিসেম্বর সুজানগর হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা এই দিনে সুজানগর উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিলো, উড়েছিলো বিজয়ের পতাকা। পাক হানাদার মুক্ত হয়ে সমগ্র এলাকার মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছিলো।
এই দিনে সুজানগরের মানুষ খুঁজে পেয়েছিল দীর্ঘদিনের যুদ্ধ বিজয়ের আনন্দ । হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার সূর্যদ্বোয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপরই বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে সুজানগরের সর্বস্তরের জনতা। সকাল ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে এবং সুজানগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শহীদ পরিবারবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সহ বিভিন্ন সংগঠন ।
পরে বেলা ১১ টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনে মুক্তি শোভাযাত্রা বের হয়ে সুজানগর পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন সভা কক্ষে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিৎ দেবনাথ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন, পাবনা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(সুজানগর সার্কেল) ফরহাদ হোসেন, ও থানা অফিসার ইনচার্জ বদরুদ্দোজা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম রেজা, মুক্তিযোদ্ধকালীন এফ.এফ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন সন্টু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আব্দুল জলিল বিশ্বাস, আব্দুল হাই,তোফাজ্জল হোসেন তোফা,সামছুল আলম প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ।
অনুষ্ঠানে সুজানগর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ,উপজেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক রাজা হাসান, বিআরডিবির সভাপতি একিউএম শামছুজ্জোহা বুলবুল,সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার রাজু আহমেদ,সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, সাবেক প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক বাবু, সুজানগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এ আলিম রিপন, সুজানগর পৌর যুবলীগের সভাপতি জুয়েল রানা,সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম তমাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নেতা জুয়েল ও জায়দুল হক জনি, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সোহাগ সহ সুজানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য ১১ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন, জহুরুল ইসলাম বিশু, মকবুল হোসেন সন্টু, শামছুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান হাবিব এবং শহীদ মোস্তফা কামাল দুলাল, শহীদ নূরুল ইসলাম ও শহীদ আবু বকর সহ আমরা প্রায় তিন থেকে চার’শ মুক্তিযোদ্ধা পাঁচ ভাগে বিভক্ত হয়ে থানা আক্রমণ করে। আর ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর তিন দিনে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল দুলাল, নূরুল ইসলাম, আবু বকর পাক হানাদার বাহিনীদের হাতে শাহাদত বরণ করেন।
তিনদিন ব্যাপি যুদ্ধ পরিচালনার পর ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১সাল ভোর পৌনে ৭টার দিকে পাকিস্তানী হনাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। এসময় আমাদের হাতে ৫ পাকিস্তানি হানাদার নিহত হয় এবং জনতার হাতে ধরা পড়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে আরো প্রায় ১৫-১৬ জন মারা যায়।আর এভাবে সুজানগর উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় এবং ওঠে বিজয়ের পতাকা বলে জানান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
No comments