সুজানগর পদ্মার চরে ফসলের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষকেরা
এম এ আলিম রিপনঃ সুজানগর উপজেলার পদ্মার জেগে ওঠা চর এবার কৃষকদের আশার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। চরের উপর নানা রকম ফসল ও সবজি চাষের কারণে চারদিকে এখন সবুজ আর সবুজ। পদ্মার বর্ষা মৌসুমে এক রকম রুপ আর শুষ্ক মৌসুমে তার আরেক চেহারা দেখা যায়। আর এখন পদ্মার পাড় সবুজে ছেঁয়ে গেছে। উপজেলার পদ্মার চর এলাকা চরভবানীপুর, চরসুজানগর, নাজিরগঞ্জ, সাগরকান্দি, চর খলিলপুর, চর লক্ষিপুর সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বর্তমানে চরের উপর কৃষকেরা ব্যাপক বাদাম চাষ করেছেন। এছাড়াও বাঙ্গি, পাট, ধান, ও সবজির ক্ষেতও রয়েছে। তবে বাদাম সহ অন্যান্য ফসল ভাল হলেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত এ অঞ্চলের কৃষকেরা। উপজেলার চরভবানীপুর গ্রামের কৃষক আবু তালেব বলেন পেঁয়াজ ও ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এমনিতে চরম সঙ্কটে রয়েছে কৃষকেরা, তারপর যদি চরের উপর উৎপাদিত নতুন এ সকল ফসলেরও সঠিক দাম না পান তাহলে ভারতের মত এদেশের কৃষকেরও আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।
সুজানগর উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশে রয়েছে পদ্মা নদী। আর এই বিশাল জায়গা জুড়ে যেখানে চর জাগছে সেখানে তাকালেই চোখে পড়বে বাদাম সহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্র। এবার চরের উপর দিয়ে ফসলও অনেক ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে এখানকার কৃষকরা। তারা আরো জানিয়েছে যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে আমারা ভালো ফসল পাবো। আর এখন পদ্মার সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনিই দুর-দুরান্ত থেকে পদ্মার পাড়ে আসছে মানুষ।
চরে ঘুরতে আসা সুজানগর প্রেসক্লাবের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী বলেন চরের উপর গেলে ভালো লাগে। আমি যখন সময় পাই তখনি এদিকে ঘুরতে আসি। সুজানগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এ আলিম রিপন বলেন সুজানগরের পদ্মা নদীর মাঝখানে চর জাগছে চরে দাড়ালে মনে হয় সমুদ্রের বেলা ভুমি। এবং ছোট ছোট পাখি আছে উড়ে বেড়ায় সেগুলো দেখতে ভাললাগে। চরের উপর নানা রকম ফসল ও সবজি চাষের কারণে চারদিকে এখন সবুজ আর সবুজ। এই প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেও অনেক ভালো লাগে তাই এখানে মাঝে মাঝে আসি।
উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের চর লক্ষিপুর গ্রামের বাদাম চাষী আবেদ বলেন, এবার তিনি চরের উপর ১৪ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। বাদাম গাছও অনেক সুন্দর হয়েছে। তিনি আশাপ্রকাশ করেন এবার তিনি বাদাম চাষ করে লাভবান হবেন। আর ঈদের পরপরই পুরোদমে বাদাম তোলা শুরু করবে কৃষকেরা। উপজেলার চর-খলিলপুর গ্রামের কৃষক মনজেদ আলী বলেন প্রতি বিঘা বাদাম চাষ করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা । আর প্রতি বিঘায় তিনি বাদাম পাবেন সর্বনিম্ন ১৫ মণ থেকে সর্বোচ্চ ২০ মণ পর্যন্ত। তিনি আরো বলেন চরের উপর ফসল ভালো হয় এবং খরচ কম হয়। তাই ফসল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
একই গ্রামের কৃষক জব্বার শেখ বলেন, আমি এবার ৬ বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি । ধান মোটা মোটি ভালো হয়েছে। আমার বেশি ধান কেটে ফেলছি আর কিছ ধান আছে কাটতে বাকি। এখানে ধান চাষ করতে তেমন কোন খরচ হয়না । এখানের মাটিতে পলি পড়ার কারণে দেখা যায় যা লাগাবে তাই ভালো হবে। আমাদের ধানে এখানে তেমন কোন সার প্রয়োগ করতে হয়না এবং শ্রমিক অনেক কম লাগে। তাই এখানে চাষাবাদ করে আমরা লাভবান হই। আমরা প্রতি বিঘা ধান পাবো ১৭ থেকে ১৮ মণ।
ভুট্রা ও পাটচাষী সাগরকান্দি গ্রামের ইন্তাজ ফকির বলেন, এবার চরেরউপর আমি পাট ও ভুট্রা চাষ করেছি গাছ ও অনেক ভালো হয়েছে। আমি আশা করছি ফসল ভালো হবে এবার আমরা লাভবান হব। চরেরউপর মাটি উর্বর থাকার কারণে দেখা যায় যেটায় চাষা বাদ করা যায় সেটায় ভালো হয়্ এবং খরচ কম লাগে চাষাবাদ করতে ।
সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিসার ময়নুল হক সরকার বলেন, বর্ষা মৌসুমে তো ডুবে থাকে আর এই মৌসুমে চর জাগে তাই সেখানে প্রচুর চিনা বাদাম হয়। এক মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকার কারণে দেখা যায় মাটিতে পলি পড়ে জমি উর্বও হয়। তার কারণে কৃষকদের খরচ কম হয় ফসলও ভালো হয়।
No comments