সুজানগরে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে বিড়ি সিগারেট, খুশি সাধারণ মানুষ, ক্ষোভ প্রকাশ ধূমপায়ীদের
এম এ আলিম রিপনঃ জাতীয় বাজেটে যে হারে শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে তার চেয়ে অধিক দামে সুজানগরে বিড়ি সিগারেট বিক্রি করা হচ্ছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় বিভিন্ন বিড়ি সিগারেট কোম্পানীর দায়িত্বরতরা নিজেরা অর্থায়ন করে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণের সিগারেট ক্রয় করে ডিপো ও বাসা-বাড়িতে অথবা গোপন গুদামে মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ব্যাপক অর্থ লুটে নিচ্ছেন।
কন্জুমারদের প্রশ্ন, সরকার সিগারটের উপর শুল্ক বৃদ্ধির পর কোম্পাণীগুলো সিগারেটের নতুন করে মূল্য নির্ধারণ করলে নিশ্চই তা নতুন প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকত। কোম্পানীগুলো বাজারে অধিক দামে সিগারেট বিক্রি করলেও সরকার কি অতিরিক্ত শুল্ক পাচ্ছে? না পেলে সাধারণ ক্রেতার অতিরিক্ত অর্থ যাচ্ছে কোথায়? বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে কোম্পানীর পাশাপাশি লাভবান হচ্ছে মজুদদাররা।
ধুমপায়ীদের দাবি, ভোক্তা অধিকার আইনে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর অন্যদিকে যারা ধুমপান করেননা তারা তামাকজাত পণ্যের আরো বেশি করে দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের দাবী ধুমপানে ক্ষতি ছাড়া মানুষের কোন লাভ হয়না তাই তারা বিড়ি সিগারেটের দাম বর্তমানে চেয়ে দ্বিগুন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সুজানগর উপজেলায় সিগারেটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ধুমপায়ীরা। গত এক মাস ধরে এ অবস্থা চলমান থাকলেও প্রশাসনিকভাবে এসব সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সুজানগরের কতিপয় ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর সুপারভাইজার, এসআররা যোগসাজসে সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফার লোভে সিগারেট বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এ সুযোগে কেউ কেউ শলাকা প্রতি ১ থেকে ৩ টাকা বেশী দামে ও প্যাকেট প্রতি পাইকাররা ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশী দামে বিক্রি করছেন। হঠাৎ করে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
সুজানগরের সিগারেট কোম্পানীর পরিবেশক, সুপারভাইজার ও হাতে গোনা কয়েকজন পাইকারি ব্যবসায়ী ধুমপায়ীদেরকে জিম্মি করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাজেট ঘোষণার আগ মুহূর্তে প্রশাসনের চোখের সামনে একই ভাবে অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রি করছেন। প্রতি বছর বাজেট পেশ হয়ে থাকে জুন মাসে। আর তা কার্যকর হয় অন্তত: এক মাস পর। অথচ দেখা যায় বাজেট ঘোষণার আগেই সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সরকারের ভোক্তা অধিকার আইন লঙ্ঘন করে প্রতি বছরের মত এবারও বাজেট ঘোষণার আগে সুজানগরে তামাকজাত দ্রব্যের বিভিন্ন ধরনের সিগারেট প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। এর ফলে পরিবেশক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ধুমপায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রিটিশ টোবাকো লিমিটেডের একাধিক সিগারেটের মধ্যে সুজানগরে বেশী চলে বেনসন, গোল্ডলিফ, ক্যাপেস্টান, স্টার ও ডারবি। অপরদিকে, জাপান টোবাকোর একাধিক সিগারেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিক্রি হয় নেভী ও শেখ সিগারেট। বর্তমান বাজারে বেনসন ২০ শলাকার প্যাকেট ২‘শ ১০ টাকা যা এখন বিক্রি হচ্ছে ২‘শ ২০ থেকে ২‘শ ২৫ টাকায়। প্রতি শলাকা হিসেবে খুচরা বাজারে ১২ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকায়। গোল্ডলিফ ও ক্যাপেস্টান ২০ শলাকার প্যাকেটের পাইকারি দাম ১‘শ ৪৮ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১‘শ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা খুচরা ৮ টাকার পরিবর্তে ৯ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডার্বি ১০ শলাকার প্যাকেট ৩৫ টাকা দাম হলেও বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, খুরচা ৪ টাকার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকায়। অনুরূপভাবে স্টার ৫ টাকার জায়গায় বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকা দরে। একই সাথে ৪ টাকার শেখ বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা ও নেভী ৫ টাকার জায়গায় ৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন খুচরা দোকানে।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুজানগর উপজেলায় প্রতিদিন বেনসন ১৫ হাজার, গোল্ডলিফ ১৪ হাজার, স্টার ৫৫ হাজার, ডার্বি ৬০ হাজার, পাইলট ও হলিউড ১৮ হাজার, নেভী ৫৫ হাজার ও শেখ ৩০ হাজার শলাকা সিগারেটের চাহিদা রয়েছে। ফলে ওই সিন্ডিকেট চক্র বেনসন প্রতি শলাকা ৩ টাকা হারে ৪৫ হাজার, গোল্ডলিফ ২ টাকা হারে ২৮ হাজার, স্টার ১ টাকা হারে ৫৫ হাজার, ডার্বি ১ টাকা হারে ৬০ হাজার, নেভী ১ টাকা হারে ৫৫ হাজার ও শেখ ১ টাকা হারে ৩০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা প্রতিদিন অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন ধুমপায়িদের কাছ থেকে। এদিকে সুজানগরের নিম্ন আয়ের ধুমপায়ীদের নিকট আজিজ ও ভাই ভাই বিড়ির চাহিদা বেশি হওয়ায় দোকানীরা প্যাকেট প্রতি ৩ টাকা হারে বেশি নিচ্ছে।
এসব বিষয়ে একাধিক খুচরা ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারা জানান, কোম্পানি থেকে চাহিদা অনুযায়ী সিগারেট দেয়া হচ্ছে না তাদের। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বেশী দামে পাইকারি দোকান থেকে সিগারেট কিনে বেশী দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
No comments