ব্রেকিং নিউজ

আতঙ্ক নয় সচেতনতার মাধ্যমেই সম্ভব প্রতিরোধ। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কোন জিজ্ঞাসা থাকলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের “স্বাস্থ্য বাতায়ন” এ গ্রামীণফোন গ্রাহকরা ফ্রি কল করুন ১৬২৬৩ নম্বরে। -করোনা ভাইরাসের আপডেট জানতে এখানে ক্লিক করুন-

সুজানগরে বিলুপ্ত প্রায় ‘গরিবের এসি’ মাটির ঘর


এম এ আলিম রিপন : কালের পরিক্রমে ইট পাথরের দালানে চাপা পড়েছে  গ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্য ‘গরিবের এসি’ মাটির ঘর।

 এমন এক সময় ছিলো গ্রাম বাংলার মানুষের ঘরে দরজা ছিল তো জানালা ছিলনা। মাটির দেয়ালের ঘর,ওপরে টিন বা খড়ের চাল, সামনে বড় উঠোন এই হলো ‘গরিবের এসি’ বলে জানতো সবাই। আর ঘরের পেছনে থাকতো ছোট্ট একটি পুকুর আর সেখান থেকে আসতো শীতল হাওয়া। চারপাশে গাছ-গাছালিতে ভরপুর। এক সময় এমন মনোরম দৃশ্য চোখে পড়তো সুজানগরের বিভিন্ন গ্রাম  অঞ্চলে। 

এখন আর সুজানগরের গ্রাম অঞ্চলে আগের মতো চোখে পড়ে না মাটির ঘর, হারিয়ে গেছে চিরচেনা সেই মনোরম দৃশ্য। ঐতিহ্যের এই স্থাপনাটি এখন স্থান পাচ্ছে হারিয়ে যাওয়ার খাতায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়ির সামনে সেই বৈঠকখানা বা খানকাঘর তো প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। শান্তির নীড় সেসব মাটির ঘরের স্থান দখল করেছে এখন ইট-পাথরের দালানে। চিরচেনা গ্রামগুলোকেও তাই এখন অচেনা লাগে।

গতকাল সুজানগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের তাঁতীবন্দ গ্রামে নতুন রেল লাইনের পাশে চোখে পড়ে একটি মাটির ঘর। সেখানে গিয়ে বাড়ীর মালিক ইয়াকুব সদ্দারের সাথে কথা হলে তিনি জানান প্রায় ৩৫ বছর আগে মাটির ঘরটি নির্মাণ করে এখনো তিনি এই ঘরেই বসবাস করছেন। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী এ  মাটির ঘর সুজানগরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ঢুঁকলে বর্তমানে  দু’একটি চোখে পড়তে পারে বলে জানান তিনি।

মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের জানান এ গ্রামে প্রায় ৫০ বছর আগে কালু মিয়া নামক এক ব্যক্তি মাটির দ্বিতল বিশিষ্ট বড় একটি ঘর নির্মাণ করেছিলেন ।অনেকেই এই ঘর দেখার জন্য আসতেন। কিন্তু কালু মিয়া মারা যাবার পর তার সন্তানেরা সম্প্রতি এ ঘরটি ভেঙ্গে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন।

 সুজানগর প্রেসক্লাবের সভাপতি(ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান আলী মন্ডল এবং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এ আলিম রিপন বলেন  আধুনিকতার খাতিরে বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনযাপনের চিত্র। বদলে যাচ্ছে থাকার জায়গা, পোশাক-আশাক, যোগাযোগ ব্যবস্থা। শতশত মানুষের কর্মব্যস্ততা যেমন বাড়ছে। ঠিক তেমনি আস্তে আস্তে নাই হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এসব মাটির ঘর। 

সুজানগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ ও তোফাজ্জল হোসেন জানান আশির দশকেও এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি দেখা যেত।আর বৈঠকখানা বা খানকাঘরে এক সময় বসতো গ্রামের মানুষের আড্ডা, বিনোদন আর গল্পের আসর। সাধারণ মানুষ তাদের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা প্রকাশ করতেন মোড়ল বা মাতুব্বরদের কাছে এ খানকা ঘরে বসে। হুকোয় টান দিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতেন তারা।কিন্তু বর্তমানে এগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। 

সুজানগর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক আব্দুস শুকুর বলেন অধিকাংশ বাড়ি এখন ইট পাথরের তৈরি। মাটির তৈরি এসব ঘর এখন আর চোখে না পড়লেও এটা মানতে হবে যে, এই ঘরগুলো শীত বা গরমে থাকার জন্য বেশ আরামদায়ক। মাটির ঘর শীতের দিনে  থাকে উষ্ণ আর গরমের দিনে শীতল। তাই মাটির ঘরকে ‘গরিবের এসি’ বলা হয়ে থাকে।

 সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন  বলেন আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে দালান-কোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির ঘর। এক সময় সুজানগর পৌরসভা সহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অনেক পরিবার মাটির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। গরিবের এসির সংখ্যাধিক্যে ইট-পাথরের তৈরি পাকা দালানের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সেই দিন বদলে গেছে। কাঁচাঘর ফেলে পাঁকাঘর নির্মাণে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের মানুষ। ফলে বর্তমানে হাতেগোনা দু’একটি চোখে পড়ে  আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য এই মাটির ঘর ।

No comments

Powered by Blogger.