সুজানগরের পদ্মায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীভাঙ্গনে বসতভিটা ও আবাদী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার
এম এ আলিম রিপনঃ অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মা নদীভাঙ্গনে বসতভিটা সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের শত শত পরিবার এবং নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা আবাদী জমি। সরকারিভাবে এসব বালু উত্তোলন নিষেধ থাকলেও একশ্রেনীর অসাধু বালু ব্যবসায়ী সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা এবং ধাওয়াপাড়া ও কালুখালী সহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবাধে এ বালু উত্তোলন করছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নদী পাড়ের মানুষেরা। নাজিরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান জানান অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এরই মধ্যে বিলিন হয়ে গেছে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ফকিৎপুর, নরসিংহপুর, মানিকহাট ইউনিয়নের বিলমাদিয়া, তিল মাদিয়া, মামুদিয়া, নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চর বরখাপুর, বিজলীচর, রাণীনগর, বালিয়াডাঙ্গি ও সাদারচর সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের বরখাপুর গ্রামের বাসিন্দা খালেক হোসেন নামক এক ব্যক্তি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান তার প্রায় ৫০ বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে যে বাড়িতে বসবাস করছি সেটাও বর্তমানে ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে।
বুলচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা খাতুন বলেন নদী ভাঙ্গনের ফলে তার নিজের বসতভিটাটি এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বাধের পাশে অবস্থান নিয়েছেন পরিবার নিয়ে। মনজেদ হোসেন নামে আরেক জন জানান প্রকাশ্যে এভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন হলেও এটি বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করছেনা বলে অভিযোগ করেন। সাতবাড়ীয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বাছেত বাচ্চু বলেন নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে এসে সহযোগিতা না করে নদী ভাঙ্গন রোধ ঠেকাতে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে বুলচন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানাযায়, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, ভায়না ইউনিয়নের ও পৌরসভার সীমান্তবর্তী এবং জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকার পদ্মা নদী হতে নিয়মিতভাবে একশ্রেনীর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা এ বালু উত্তোলণ করছে।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি, কিন্তু বালু উত্তোলনকারীরা আমাদের কথা শোনেননি। আর বালু ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এ কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার কোথাও বালুর ইজারা নেই। কিন্ত আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছে এবং রাস্তার পাশে স্টেক দিয়ে বালু বিক্রি করছে। এতে করে যে কোন সময় দুর্ঘটনার মতো বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নাজিরগঞ্জ বাজারের আশপাশে এলাকাসহ বরখাপুর, বুলচন্দ্রপুর, সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাতবাড়ীয়া বাজার হতে শ্যামনগর ও ভাটপাড়া রাস্তার পাশে এবং রাজবাড়ী জেলার জৌকুড়া, ধাওয়াপাড়া, কালুখালী ও প্রস্তাবিত সেনানিবাস এলাকার বিভিন্ন স্থানে বালু স্তুপ আকারে রাখার কারণে যানবাহন চলাচলেও মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ সকল সড়ক দিয়ে ভোর রাত হতে ট্রাক, ট্যাক্টর, দিয়ে বিভিন্ন স্থানে বালু পৌছে দেয়া হয়। এতে করে ভারী যানচলাচলে রাস্তার অবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে।
বালুবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাগুলো চলাফেরার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনগণ বালু উত্তোলণকারীদের বাধা দিলে তারা মিথ্যা মামলা দায়ের সহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বালু তোলা বন্ধ করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসবেন।
উল্লেখ্য বালু মহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। ওই আইনের (৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রমে বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাইবে না। এবং সর্বোপরি এভাবে বালু উত্তোলন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে।
এছাড়া নদী থেকে এভাবে অবৈধপন্থায় বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে সেই ব্যক্তি বা তাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তির অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা হতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন প্রকাশ্যে এভাবে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বসতভিটা সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে এই উপজেলার নদীপাড়ের শত শত পরিবার এবং নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা আবাদী জমি। আর অবৈধভাবে এ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিৎ দেবনাথ জানান ইতিমধ্যে কয়েকবার মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়েছে। বালু উত্তোলনকারীরা অনেক সময় আমাদের আসার খবর শুনে পালিয়ে যায়।আর অবৈধভাবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
No comments