ব্রেকিং নিউজ

আতঙ্ক নয় সচেতনতার মাধ্যমেই সম্ভব প্রতিরোধ। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কোন জিজ্ঞাসা থাকলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের “স্বাস্থ্য বাতায়ন” এ গ্রামীণফোন গ্রাহকরা ফ্রি কল করুন ১৬২৬৩ নম্বরে। -করোনা ভাইরাসের আপডেট জানতে এখানে ক্লিক করুন-

অভাবের বাধ ভেঙ্গে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন এসএসসিতে সুজানগর উপজেলার শীর্ষে থাকা অনিকের


এম এ আলিম রিপনঃ সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে সুজানগর উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে আদনান শরিফ (অনিক)। সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেছিল অনিক। 

সে সুজানগর পৌরসভার ভবানীপুর (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের আব্দুল বারেক বিশ্বাসের ছেলে। এর আগে একই বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং ৪০ নং ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছিল সে। তার এই সাফল্যের পিছনে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও অভিভাবকদের অনুপ্রেরণা ও চেষ্টা  রয়েছে বলে জানায় অনিক।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায় এলাকায় ভদ্র ও ধার্মিক ছেলে হিসাবে পরিচিত  অনিক ছোটবেলাতেই তার মাকে হারায়। বিগত ২০০৬ সালের ২২ মার্চ অনিককে ছোট রেখে তার মা মমতাজ বেগম মুন্নী মারা যায়। পরবর্তীতে অনিকের পিতা  হাচিনা খাতুন নামক আরেকটি নারীকে বিয়ে করে । 

বর্তমানে অনিকরা ৩ ভাই ২ বোন। অনিকের পিতা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যে টাকা রোজগার করেন তাতে সংসার চালাতেই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অনিকের পিতার। এর মধ্যে আগামীতে অনিককের পড়াশুনার খরছ কিভাবে বহন করবে তার পরিবার এই নিয়ে শঙ্কিত। 

এর আগে অনিকের ইচ্ছা ছিল পাবনা জেলা স্কুলে পড়ার। সে অনুযায়ী  জেলা স্কুলে ৭ম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও শুধুমাত্র অর্থের কারণে জেলা স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করতে পারেনি অনিক বলে জানান তার পিতা আব্দুল বারেক বিশ্বাস।  

প্রতিবেশীরা জানায় আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায়, অনিকের সৎ মা হাচিনা খাতুনের কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা এবং অনিকের অকৃত্রিম সাধনা ও চেষ্টার ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।  

অনিকের মা হাচিনা খাতুন জানান অনিক আমার সৎ ছেলে হলেও আমি কখনও ওর মায়ের অভাব বুঝতে দেইনি। নিজে অনেক কষ্ট করে অন্য সন্তানদের মত অনিককেও মানুষের মত মানুষ করে গড়ে  তুলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অভাবের সংসারে এখন জানিনা কতদূর ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। 

এদিকে অনিক তার সাফল্যের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করা সহ শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবং অভাবের বাধ ভেঙ্গে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে একজন প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা তার বলেও জানায় অনিক। 

সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, এসএসসি পরিক্ষায় মোট ১৩০০ মার্কসের মধ্যে ১২২১ পেয়ে সুজানগর উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে অনিক। উপজেলার অন্য সকল নামী-দামী স্কুলের পরীক্ষার্থীদের পেছনে ফেলেছে সে। তিনি আরও জানান, অনিকের এই কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট বিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। তিনিসহ সবাই তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছেন।

অত্র বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সুজানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, অনিক উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। মেধাবী ছাত্র অনিক শুধু তার পিতা-মাতা, এলাকাবাসী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয় সারা উপজেলাবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।

No comments

Powered by Blogger.