ব্রেকিং নিউজ

আতঙ্ক নয় সচেতনতার মাধ্যমেই সম্ভব প্রতিরোধ। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত কোন জিজ্ঞাসা থাকলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের “স্বাস্থ্য বাতায়ন” এ গ্রামীণফোন গ্রাহকরা ফ্রি কল করুন ১৬২৬৩ নম্বরে। -করোনা ভাইরাসের আপডেট জানতে এখানে ক্লিক করুন-

মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে সুজানগরের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সাঈদ


স্টাফ রিপোর্টারঃ সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামের মরহুম মোকছেদ আলী মাস্টারের বড় ছেলে যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ উত্তরা লুবানা হাসপাতালে ৬০৫ নাম্বার কেবিনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। 

তিনি গত ১১ মে রাজধানীর শ্যামলী স্পেশালাইজড হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর ২টি পা কাটা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদের চিকিৎসক ভাস্কুলার বিশেজ্ঞ ডাঃ এম, এস, এ সবুর সাহেব বলেন তার অড়ৎঃরপ রষরধপ ড়পপষঁংরাব ফরংবধংব নামক রক্তনালীর এক বিরল রোগে তার মহাধমনী ব্লক করায় পা-দুটি কেটে ফেলা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার এ্যজমা,ডায়াবেটিস,প্রোস্টেটের সমস্যা আছে। 

যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ সাতবাড়ীয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকা কালে ১৯৭১ইং সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাবা মাকে না বলে মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং দিতে পায়ে হেঁটে ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আহম্মেদ তফিজ উদ্দিন মাষ্টার। 

কেচুয়াডাঙ্গা ইউথ ক্যাম্পে ট্রেনিং দিয়ে উচ্চতর ট্রেনিং দিতে বিহার প্রদেশের চাকুলিয়ায়  যান। চাকুলিয়া উচ্চতর ট্রেনিং শেষে পূনরায় আবার মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বেলতলিতে ট্রেনিং দেন। তিনি এফ এফ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। তার এফ,এফ নং-ভারতীয় ৩৫৮৭৯,চাকুলিয়া নংং-৫১১৮, তিনি ৭নং সেক্টরে ছিলেন সেক্টর কমন্ডার ছিলেন জনাব নুরুজ্জামান তার আঞ্চলিক  কমান্ডার ছিলেন সাবেক (পাবনা-২) সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সন্টু। তিনি বাংলাদেশে প্রথম শ্রেনির ভাতা প্রাপ্ত একজন যোদ্ধাহত অন্ধ মুক্তিযোদ্ধা। 

বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কতৃক কলেজগেট  ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে জে-৬ একটি ফ্লাট বরাদ্ধ পান। মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর থানার বেলতলিতে ট্রেনিং শেষে ২আগষ্ট জলঙ্গিঁ বর্ডার হয়ে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা করেন। 

সাবেক (পাবনা-২) সংসদ সদস্য কমান্ডার মকবুল হোসেন সন্টু বলেন যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ খুব সাহসি যোদ্ধা ছিলেন তার সাহসিকতায় কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচলানা করা হয় তার উল্লেখযোগ্য নাজিরগঞ্জ নদী পথে লঞ্চ যোগে সাতবাড়ীয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমন করতে আশা পাকিস্তানী সেনাদের উপর বিরতিহীন আক্রমন চালিয়ে তাদেরকে নাজিরগঞ্জ পদ্মা নদীতে সলিল সমাধি করেন। 

যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ অনেক সাহসের সাথে যুদ্ধে অংশ নিতেন সর্বশেষ ১১ই ডিসেম্বর সুজানগর থানা শক্রমুক্ত করতে গিয়ে চোখের কোনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মূল্যবান দুটি চোখ হাড়ান। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু যথেষ্ট চেষ্টা করেও তার চোখ ভাল করতে পারেন নাই। 

বঙ্গবন্ধু যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদের বাবাকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে বলেছিলেন এই অবস্থায় তিনি ছেলেকে দিয়ে কি করাতে চান। তখন তার বাবা মোকছেদ আলী মাষ্টার বলছিলেন আমার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবো কিন্তু তা আর হলো না তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন হবে ইনশাল্লাহ্, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদকে বলেছিলেন তুমি আমার কাছে কি চাও ?  বঙ্গবন্ধুর জবাবে তিনি বলছিলেন আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছু চাই না দেশের সব মুক্তিযোদ্ধারা যেন দুটো ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে পারে আপনি তার সু-ব্যবস্থা করবেন। 

বঙ্গবন্ধুর সাথে  কথোপকথন তৎকালীন  সাপ্তাহিক ’মুক্তি বার্তা’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। পরিশেষে যোদ্ধাহত অন্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান সাঈদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা নিয়ে অন্ধ অবস্থায় লেখাপড়া করতে থাকেন তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সাতবাড়ীয়া কলেজ থেকে এইচ, এস,সি, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স সহ এম এ সেকেন্ড ক্লাশ নবম পজিশন করেন। কিন্তু তৎকালিন সরকার তাকে কোন চাকরি দেন নাই। তিনি দাবা খেলতে পছন্দ করতেন। 

সমাজ সেবায় তার ব্যপক অবদান রয়েছে। হঠাৎ তিনি মার্চের ১ম সপ্তাহে অসুস্থ হইলে ঢাকা সরোয়ার্দি হাসপাতালে নেওয়া হয় কিন্তুু উক্ত হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার তালাবদ্ধ থাকায় করোনার কারনে অন্য কোন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। এখান থেকে রিলিজ করার পর ওনাকে  ভাস্কুলার  সার্জারীর পরামর্শ দেওয়া হয় কিন্তু তিনি একজন সূর্য্য সন্তান হয়েও  তার পরিবার কোন ভাবেই সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করতে না পারায় প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন। 

তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে দুইটি চোখ হারান,অবশেষে করোনার কারনে নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় তার পা দুটিও হাড়ালো। তার ছোট ভাই এ,কে,এম মঞ্জুরুল হক পরিবারের পক্ষ থেকে উনার সু-চিকিৎসায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং আত্বীয়স্বজন,বন্ধু বান্ধব ও দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থী আল্লাহ যেন উনাকে সুস্থ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। 

No comments

Powered by Blogger.